আপডেট
সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপণমুক্ত সাইট। শিখুন-জানুন বিরক্তিছাড়া।
বাংলা ভাষায় অলাভজনক বৃহত্তম ইসলামিক ওয়েবসাইট বানানোর প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে ইসলামী জীবন টিম। আসছে মোবাইল অ্যাপলিকেশন... সাইট www.islamijibon.net

শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭

রজব মাসের ফযিলত, রোজা রাখা ও আমল (পর্ব ২)

একটি জান্নাতী নহরের নাম রজব

হযরত সায়্যিদুনা আনাস رضى الله عنه থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তাআলার রসূল হযরত মুহাম্মদ ইরশাদ করেন, “জান্নাতে একটা নদী রয়েছে, যাকে ‘রজব’ বলে, যা দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। তাই যে ব্যক্তি রজব মাসের একটি রোযা রাখবে, আল্লাহ তাকে ওই নদী থেকে পান করিয়ে তৃপ্ত করবেন।” (শুয়াবুল ঈমান, খন্ড-৩য়, পৃষ্ঠা-৩৬৭, হাদীস নং-৩৮০০)

নুরানী পাহাড়

একদা হযরত ঈসা عليه السلام আলোক ঝলমল এক পাহাড় দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আল্লাহ তাআলার দরবারে আরয করলেন, “হে আল্লাহ! এই পাহাড়কে কথা বলার শক্তি দান করুন।” তখন ঐ পাহাড় কথা বলতে লাগল। “ইয়া রুহুল্লাহ! আপনি কি চান?” ঈসা عليه السلام বললেন, তোমার অবস্থা বর্ণনা কর।” পাহাড় বলল “আমার ভিতর একজন মানুষ আছে।” তখন হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রুহুল্লাহ عليه السلام আল্লাহর দরবারে আরয করলেন, হে আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে আমার নিকট প্রকাশ করে দিন। (এই কথা বলার সাথে সাথে) সেই পাহাড় এমনিতে ফেটে গেল এবং এর ভিতর থেকে চাঁদের মত উজ্জল চেহারা বিশিষ্ট একজন মানুষ দেখা গেল। তিনি আরয করলেন, “আমি হযরত সায়্যিদুনা মুসা কলিমূল্লাহ عليه السلام এর উম্মত। আমি আল্লাহর কাছে এই দু’আ করেছিলাম যেন তিনি আমাকে তাঁর প্রিয় মাহবুব হযরত মুহাম্মদ এর আগমনের সময় পর্যন্ত জীবিত রাখেন যাতে আমি তার যিয়ারত করতে পারি এবং তাঁর উম্মত হওয়ার সম্মানও অর্জন করতে পারি।

الحمد لله عزوجل এই পাহাড়ে আমি ছয়শত (৬০০) বছর ধরে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে মশগুল রয়েছি। হযরত ঈসা عليه السلام আল্লাহ তাআলার দরবারে আরয করলেন, “হে আল্লাহ যমিনের উপরে এই বান্দার চেয়েও তোমার দরবারে অধিক সম্মানিত কোন বান্দা আছে কি? (আল্লাহর পক্ষ থেকে) ইরশাদ হল, “হে ঈসা عليه السلام! উম্মতে মুহাম্মদী এর মধ্যে যারা রজব মাসে একটি রোজা রাখবে সে আমার নিকট এর চাইতেও সম্মানিত।”
(নুযহাতুল মাজালিশ, খন্ড-১ম, পৃ-১৫৫)

আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।

একটি রোযার ফযীলত

সর্বজন গ্রহণযোগ্য আলিমে দ্বীন, হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী رحمة الله عليه বর্ণনা করেন যে, সুলতানে মদীনা হযরত মুহাম্মদ এর বাণী হচ্ছে, “রজব মাস হারাম তথা পবিত্র মাস সমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর ৬ষ্ঠ আসমানের দরজায় এই মাসের দিনগুলি লিখা রয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি এই মাসের একটি রোজা রাখে আর তা তাকওয়াপরহিযগারীর মাধ্যমে পূর্ণ করে, তখন সেই দরজা ও রোযা ঐ বান্দার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং আরজ করবে, “হে আল্লাহ! এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও।” আর সেই বান্দা যদি তাকওয়া পরহিযগারীতা ছাড়া রোজা অতিবাহিত করে তাহলে সেই দরজা ও দিন তার গুনাহ্ ক্ষমার জন্য আল্লাহর নিকট আবেদন করে না। আর রোযাদারকে বলবে, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার নফস তোমাকে ধোঁকা দিয়েছে। (মাসাবাতা বিসসুন্নাহ, পৃ-৩৪২)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেল যে, রোযার উদ্দেশ্য শুধু ক্ষুধার্ত আর তৃষ্ণার্ত থাকা নয় বরং সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গকেও গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখা। যদি রোজা রেখেও গুনাহের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, তবে সে কঠিনভাবে বঞ্চিত হবে।

হযরত নূহ عليه السلام এর কিশতিতে রজবের রোযার বাহার

হযরত সায়্যিদুনা আনাস رضى الله عنه থেকে বর্ণিত, রসূল ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি রজব মাসের একটি রোযা রাখল তবে তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি আটটি রোজা রাখবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ১০টি রোজা রাখবে সে আল্লাহর কাছে যাই চাইবে তা আল্লাহ তাকে দান করবেন। যে ব্যক্তি পনেরটি রোজা রাখবে, তখন আসমান থেকে এক আহ্বানকারী আহ্বান করে বলবে যে, তোমার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। তুমি আজ থেকে নতুন করে আমল শুরু কর। তোমার গুনাহ সমূহ নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। আর যারা এর চেয়ে বেশি করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে বেশি পরিমাণে দান করবেন। আর রজব মাসেই হযরত নুহ عليه السلام কিশতিতে আরোহন করেছিলেন, তখন তিনি নিজেও রোজা রেখেছেন, সাথে সাথে সাথীদেরকেও রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার কিশতি ১০ই মহরম পর্যন্ত ছয় মাস সফর অবস্থায় ছিল। (শুআবুল ঈমান, খণ্ড-৩য়, পৃ-৩৬৮, হাদীস নং-৩৮০১)

জান্নাতী মহল

হযরত সায়্যিদুনা আবু কিলাবা رضى الله عنه ইরশাদ করেন, “রজব মাসের রোযাদারদের জন্য জান্নাতে একটি মহল রয়েছে।”
(শুআবুল ঈমান, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬৮, হাদীস নং-৩৮০২)

পেরেশানী দূর করার ফযীলত

হযরত সায়্যিদুনা ইবনে যুবাইর رضى الله عنه ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি রজব মাসে কোন মুসলমানের চিন্তা দূর করবে, তবে আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে এমন একটি মহল দান করবেন যার প্রশস্ত হবে দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত। তোমরা রজব মাসের সম্মান কর, আল্লাহ তোমাদেরকে হাজার কারামতের সাথে সম্মানিত করবেন। (গুনিয়াতুত তালেবীন, পৃ-২৩৪)

একশত (১০০) বছরের রোযার সাওয়াব

২৭ শে রজবের গুরুত্বের কথা কি বলব! ঐ তারিখে আমাদের প্রিয় আকা হযরত মুহাম্মদ এর উপর ১ম বার ওহী নাযিল হয়েছে এবং এই তারিখেই মেরাজের সেই আজিমুশশান মুজিজা প্রকাশ পেয়েছিল। ২৭ রজব শরীফের রোযার অনেক ফযীলত রয়েছে।
যেমন-হযরত সায়্যিদুনা সালমান ফারসী رضى الله عنه হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত মুহাম্মদ ইরশাদ করেন, “রজবে একটি দিন ও রাত এমন রয়েছে, যে ব্যক্তি সে দিনে রোযা রাখবে ও রাতে নফল ইবাদতে অতিবাহিত করবে, তা শত বছরের রোযার সমান। আর তা হল ২৭ রজব। ঐ তারিখেই আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ এর নিকট ওহী প্রেরণ করেছেন।” (শুআবুল ঈমান, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৭০, হাদীস নং-৩৮১১)

একটি নেকী শত বছরের নেকীর সমান

রজব মাসে এমন একটি রাত রয়েছে ঐ রাতে নেক আমলকারীদেরকে একশত বছরের নেকীর সাওয়াব দান করা হয়। আর তা রজবের ২৭ তারিখের রাত। যে ব্যক্তি ঐ রাতে ১২ রাকাআত নামায এইভাবে আদায় করবে যে, প্রতি রাকাআতে সুরায়ে ফাতিহা ও অন্য যে কোন একটি সুরা পাঠ করবে আর প্রতি দুরাকাআত পর পর আত্তাহিয়্যাতু পড়বে এভাবে ১২ রাকাআত পূর্ণ হলে সালাম ফিরাবে এরপর ১০০ বার বর্ণিত দু‘আ পড়বে سُبحَانَ اللهِ وَالحَمدُ لِلهِ وَلَااِلهَ اِلَّ اللهُ وَاللهُ اَكبَر, ১০০ বার ইস্তিগফার, ১০০ বার দুরূদ শরীফ আর নিজ দুনিয়া ও আখিরাতের যা ইচ্ছা তা চেয়ে দু’আ করবে, আর সকালে রোযা রাখবে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তার সমস্ত বৈধ দু’আ কবুল করবেন। (শুআবুল ঈমান, খণ্ড-৩য়, পৃ-৩৭৪, হাদীস নং-৩৮১২)

২৭ তারিখের রোজা ১০ বছরের গুনাহের কাফ্ফারা

আলা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, ওলিয়ে নে’মত, আজিমূল বরকত, আজিমূল মরতাবাত পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত, মুজাদ্দিদে দ্বীনো মিল্লাত, হামিয়ে সুন্নাত, মাহিয়ে বিদআত, আলিমে শরীআত, পীরে তরিক্বত, বায়েছে খায়রু বরকত, হযরত আল্লামা মওলানা আলহাজ্ব আল হাফিয আল কারী আশ শাহ ইমাম আহমদ রযা খান رحمة الله عليه ইরশাদ করেন যে, “ফাওয়ায়িদে হানাদে” হযরত সায়্যিদুনা আনাস رضى الله عنه হতে বর্ণিত আছে, নবীয়ে করিম, রঊফুর রহীম হযরত মুহাম্মদ ইরশাদ করেছেন, “২৭ রজবে আমার নবুওয়্যত প্রকাশ হয়েছে। যে ব্যক্তি এই দিন রোজা রাখবে আর ইফতারের সময় দু‘আ করবে, (তাহলে তা) ১০ বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হবে।” (সংশোধিত ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ্, খন্ড-১০ম, পৃ-৬৪৮)
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত রমযানের ফযিলত নামক কিতাবের ৩৭৯-৩৯৮ পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। মাকতাবাতুল মদিনা থেকে কিতাবটি নিজের জন্য কিনুন, রমযানে অন্যকে উপহার দিন। যারা মোবাইলে কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন

বাংলা ইসলামিক বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন
রজব বিষয়ক আরো পড়ুন প্রথম পর্ব     তৃতীয় পর্ব

পোস্ট শ্রেণি

অযু-গোসল-পবিত্রতা (12) আপডেট চলমান (25) আমাদের কথা ও অন্যান্য বিষয়াবলী (6) আমাদের প্রিয় নবী ﷺ (5) আরবি মাস ও ফযীলত (11) ইসলামী ইতিহাস ও শিক্ষনীয় ঘটনা (6) ইসলামী জীবন ও সুন্দর চরিত্র (4) ঈদ-কাযা-জানাযা-তারাবী-নফল ও অন্যান্য নামায (5) উত্তম আমল ও সাওয়াবের কাজ (4) কুরআন-তাফসীর ও হাদিস (16) কুরবানী (6) চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য কথন (14) জিকির-দোআ-দুরূদ ও ফযীলত (8) নবী-সাহাবী ও আওলিয়াদের জীবনী (8) নামায (17) পর্দা ও লজ্জাশীলতা (16) ফয়যানে জুমা (3) বদ আমল ও গুনাহের কাজ (3) মওত-কবর-হাশর ও আযাব (12) মাসআলা-মাসাইল ও প্রশ্নোত্তর (15) মাসাইল (21) যাকাত-ফিতরা ও সদক্বাহ'র বিধান (1) রোযা/রমযানের বিধান ও ফযীলত (9) সুন্নাত ও আদব/ মাদানী ফুল (41) হজ্ব-ওমরাহ ও যিয়ারতে মদিনা (27)

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন